• Breaking News

    Breaking News House Of Al Towfiqi Promote By, ☮️ #Al_Towfiqi_Family / #আল_তৌফিকী_পরিবার ... আল তৌফিকী পরিবার || Al Towfiqi Family || عائلة التوفيقي

    Promote By, #WELFTION / وعلفشن# / #ওয়েলফশন

    Welftion Love Of Welfare

    Towfiq Sultan - তৌফিক সুলতান

    Translate

    অনুসরণকারী

    শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

    পৃথিবীতে আগমন করার পর বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল শিলা।

       অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত 




    পৃথিবীতে আগমন করার পর বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল শিলা। আমরা চার বোন এক ভাই। আমার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। মা গৃহিণী এবং আমার বাবা ব্যবসা করতেন। কিছুদিন হলো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছেন। বাবা বেঁচে থাকতে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। ফুফাতো ভাই ইতালি থাকেন। এখনো দেশে আসেন নি। আমার ফুফির স্বামী অনেকদিন হলো মারা গেMছে। তাই ছেলের বিয়ের দায়িত্ব সব তার ওপরেই বর্তায়। তাই তিনি ছেলের জন্য এবং নিজের সুবিধার জন্য ভাইয়ের মেয়েকে ছেলের জন্য ঠিক করে রাখলেন। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে জানা জানিও হলো বেশ। ছেলে ইতালি থেকে মাঝে মধ্যে কল দিয়ে আমার সাথে কথা বলত। সেই নিয়মিত কথা না বললেও নিয়মিত কথা বলার, মেসেজ করার মানুষের সংখ্যা আমার কম নেই । তবে পড়ালেখা, পারিবারিক চাপ ও ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে চলার ফলে এখন পযর্ন্ত কারো সাথেই প্রেম হয়ে ওঠে নি । আমার ফুফাতো ভাই রায়হান মাঝে মধ্যে যা কথা বলত তার মধ্যে কোনো রোমান্টিক আলাপ আলোচনা হতো না। দুষ্টুমিও করত না।  যা কথা হতো সব গতানুগতিক কথা । তাই রায়হানের প্রতি আমার তেমন মনযোগ ছিল না। মনযোগ আকর্ষণ করতে সেই ব্যর্থ। কারণ ফেসবুকের মাধ্যমে তারিফ নামের একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার বাড়ি বরিশাল। 




    যদিও প্রথম দিকে তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে একবার মেসেজ পাঠানোই যেন  তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই কি জানি একটা প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর করে দিয়েছিল। তাই বললাম আপনি তো খুব সুন্দর করে কথা বলেন। সে বলল, সুন্দর মনের মানুষের কাছে সবকিছু সুন্দর বলে মনে হয়। আমি বললাম, আমার মন তো সুন্দর নয়। সেই বলল, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য, সুন্দরী, সুন্দর, ভালো মানুষ কখনো নিজেকে সুন্দর, ভালো মানুষ বলে দাবি করে না। বড় লোক কখনো নিজেকে বড় লোক দাবি করে না। বলতে পারেন,সে যে বড় লোক সবাই জানে দাবি করার কি আছে? আমি বললাম, ঠিক তাই। আপনার মতো জ্ঞানী মানুষের সাথে কথা বলতে পেরে নিজেকে ধন্য  মনে হচ্ছে। সেই বলল, আস্তাগফিরুল্লাহ,আস্তাগফিরুল্লাহ। সুন্দরী মেয়েরা কি এভাবেই কথা বলে? আমি বললাম, আমাকে সুন্দরী বানিয়ে দিলেন? সেই বলল, যিনি আগে থেকে সুন্দরী তাকে আর কি সুন্দরী বানাবো বলেন তো? ঠিক আছে বুঝলাম।আমাকে কেন আপনার সুন্দরী মনে হয়? সেই বলল,সুন্দর জিনিসটা আপেক্ষিক বিষয়, আমার কাছে যাকে সুন্দর বা সুন্দরী বলে মনে হয় অন্যের কাছে সেটা নাও হতে পারে। আবার যাকে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী বলে মনে হয়, অনেকের কাছে সেই পাত্তাও না পেতে পারে। তবে নির্দিষ্টভাবে তোমাকে নিয়ে যদি বলি,যদিও সরাসরি প্রশংসা কিংবা দুর্নাম কোনটি ভালো না তবুও বলছি তোমার সরল মন, তোমার চলন, বলন, কথার নানা ধরন, বাইরে অমায়িক ভাব, মনের ভিতরে শয়তান দেয় লাপ, জীবনে চলার পথে এগিয়ে আছেন অনেক মানুষ থেকে অনেক ধাপ। আর আল্লাহর দেওয়া সৌন্দর্যও কম না,। যেকোনো পুরুষ কে ইম্প্রেস করতে কষ্ট পেতে হবে বলে মনে হয় না। যদি না সেখানে কোনো স্বার্থ না থাকে। আমি বললাম, এটা আসলেই সত্যি সবার চোখে সবাই সুন্দর না ।আর আমার মতেও এটা ঠিক,সৌন্দর্য শুধু চেহারা দেখে হয় না। তার সাথে এভাবে কথা বলতে বলতে  দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রতিদিন কথা বলাই  তার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতেই থাকল। তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব মনে হতো । এভাবে তারিফের সাথে কথা বলতাম যে এটা আমার ছোট বোন জানত কিন্তু কাউকে বলত না। কিন্তু একদিন বড় আপু বেড়াতে এসে জেনে গেল আমি ফুফাতো ভাই রায়হান ছাড়াও আরেকজন ছেলের সাথে কথা বলি। বড়  আপু থেকে বাবা ছাড়া পরিবারের সবাই জেনে গিয়েছিল এবং কথা না বলার জন্য সবাই নিষেধ করেছিল । 


    এরপরও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তারিফের সাথে কথা বলতাম। এর কিছুদিন পর আমার বাবা হঠাৎ করে হার্ট স্টোক করেন, হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবুও মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার বাবাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের সবাই মানসিক ভাবে  ভেঙ্গে পড়েন। এসময় আত্মীয় স্বজনদের সাথে তারিফকেও কল করে জানিয়ে দিছি বাবা পৃথিবীতে আর নেই। বাবার মৃত্যুর খবর শোনার কিছুক্ষণ পর তারিফ কল দিয়ে বলতেছে তারাও নাকি আসবে। এই কথা শুনে আমি তাকে না আসার জন্য বলে দিয়েছি।কারণ বরিশাল থেকে আমাদের কক্সবাজার আসতে আসতে বাবাকে দাফন করে দিবে। আমার কথা শুনে সেই আর আসল না। বাবার মৃত্যুর চল্লিশা দেওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই এসেছে। চল্লিশা শেষ হওয়ার কিছু দিন পর আপুরা জানতে পারে যে আমি এখনো তারিফের সাথে কথা বলি। পরিবারের সবাই আমাকে বুঝাতে শুরু করল। তাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, সেখানে আমার ভালো মন্দ দেখার মতো কেউ থাকবে না আরো অনেক কিছু যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কেমন জানি এগুলো শুনতে আমার খুবই বিরক্ত লাগছিল এবং তার প্রতি আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পরিবারের সদস্যদের কথা গুলো তারিফকে বললাম এবং সেই আমাকে বিয়ে করার জন্য পরিবারের কাছে আবেদন করতে চাইল। কিন্তু পরিবার তাতে রাজি হবে না। তাই আমি বলতে না করেছিলাম। সেজন্য সেই আর বলে নাই। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই এর পরের দিন চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট চলে আসে এবং আমাকে কল করলে পরিবারকে না জানিয়ে আমি চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট তার সাথে প্রথম দেখা করি। সেই আমি ভালো আছি কি'না এবং কিছু  খাব কি'না জিজ্ঞেস করলে আমি ভালো আছি এবং কিছু খাব না বললেও কিছু নাস্তা নিয়ে গাড়িতে ওঠে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়িতে, লঞ্চে সারা পথ তেমন কোনো কথা হয়নি। 



     কাজি অফিস থেকে সোজা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। তাদের বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, আত্মীয় স্বজন সম্পর্কে আমার আগে জানা ছিল না এবং এসব সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহও ছিল না। গিয়ে দেখি ভাঙ্গা বাড়ি সম্পদ বলতে জমানো অর্থসম্পদ নাই বললেই চলে। তারা তিন ভাই পাঁচ বোন। তারিফ ছিল পরিবারের সবার বড় কিন্তু তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর বিয়ে করেছে দুই বছর হয়েছে। তাদের ঘরে একটা ছোট কন্যা সন্তান রয়েছে। তার ছোট তিন বোনের আগে বিয়ে হয়েছে। এখন পরিবারে তার বাবা মা, ভাই, ভাইয়ের বউ, চার পাঁচ বছরের ছোট বোনদের নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। বলা যায় একটা যৌথ পরিবার।  বাড়িতে যখন ঢুকলাম তখন তারিফের বাবা ছিলেন না, মা এবং তার বোনেরা ছিলেন। আমাকে যে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন সেটা আমাদের বাড়ির কেউ না জানলেও তাদের বাড়ির সকল লোক জানতো। তাই আমাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে কোন সমস্যা হয়নি। বরিশাল শহরে পৌঁছার পর বিয়ে করে যখন তাদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমার বাড়িতে কল করেছিলাম। কল আমার বড় আপু রিসিভ করেছিল। আমি কোথায় জিজ্ঞেস করতেই আমি তারিফকে বিয়ে করেছি বলেই কেটে  দিছি। বাড়িতে আম্মু ছিল,আমার একটা খালা ছিল এবং আমার ভাই বোনেরা ছিলেন। 




    আমার বিয়ের কথা শুনে আম্মু অনেক কান্নাকাটি শুরু করেন। সমাজে এখন মুখ দেখাবে কি করে।  কিভাবে পারলে পালিয়ে যেতে? ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাদেরকে কি জবাব দিবে? নানা চিন্তা মাথায় ভর করে কান্নাকাটি করছিলেন আর বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।কারণ বাবা মারা গেছে বেশিদিন হয়নি এর মধ্যে আবার তার মেয়েটা পালিয়ে বিয়ে করেছে। যদিও বাবা থাকলে এই সাহস আমি কখনো করতাম না। পরে কল করে আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বলল কারণ এলাকার মানুষ জানে না যে আমি পালিয়ে আসছি। তাই বাড়ির লোক বলছিল বিয়ে তো হয়ে গেছে কেউ তো জানে না। তাই বাড়ি থেকে মানুষকে জানিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে সুন্দর করে বিয়ে দিবে। তারিফ বাড়িতে এটা বললে তারিফের বাড়ির কেউ রাজি হয় না। তাকে একেকজন একেক পরামর্শ দিতে থাকেন। তাকে অনেক লোক বলতে লাগলো যে তোকে এরকম বলে নিয়ে যাবে এবং তোকে বেঁধে রেখে পিটিয়ে তোর বউকে বাড়িতে রেখে তোকে কোথাও ফেলে দিবে।  এরকম নানা কথা শুনে কি করবে সে কিছু বুঝে ওঠতে  পারছিল না। তবুও নানা মানুষের নানা কথা শুনে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল আমাদের বাড়ির কথা অনুযায়ী কাজ করবে। তাই সে আমাকে আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল এবং দুইদিন পর আমাকে একটা মাইক্রো বাস নিয়ে নিতে আসলো। যদিও ইতিমধ্যে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেকেই সত্যি ঘটনা গোপনে জেনে গেছে। 



    তবুও কিছু করার নাই। কেউ জিজ্ঞেস করলে সম্মান বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলতে হয়। অনেকে আবার জিজ্ঞেস করে প্রেমের বিয়ে নাকি? তখন আমার খালাতো বোনের স্বামীর বন্ধু বলে পরিচয় দেন। যারা জানেনা তারা বুঝ পেয়ে যেত আর যারা সত্যি ঘটনা জানতো তারা মজা নিতেন। তারপর আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকার কিছু মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আমাকে নামিয়ে দিল শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসলো এবং সবকিছু সুন্দরভাবে চলতে থাকল। শ্বশুর বাড়ির সকলেই আমাকে আদর করে। তার বিশেষ কারণ হচ্ছে আমি নামাজ দোয়া পড়ি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির মানুষজন নামাজ দোয়া কম পড়ত। অভাবের সংসার তবুও দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। এই অভাবের সংসারেও আমার স্বামী তারিফ আমাদের বাড়িতে প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকা করে পাঠাতো এবং আমার ছোট ভাইবোনদের ঈদের সময় কাপড়-চোপড় কিনে দিত। তারিফ ইলেকট্রিসিটির কাজ ভালোই পারত। কিন্তু দেশের মধ্যে তার এই কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই সেই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার আত্মীয়-স্বজন যারা বিদেশ থাকেন তাদেরকে অনেক আগে থেকে  একটা ভিসার ব্যবস্থা করে দিতে বলছিলেন কিন্তু তারা কেউ নানা অযুহাতে ভিসার ব্যবস্থা করে দেননি। আমার বিয়ের পর আমার বড় আপুর স্বামী রফিকের মাধ্যমে একটা ভিসা নিয়ে সৌদি আরব চলে যান এবং অল্প দিনেই অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। কারণ সেখানে ইলেকট্রনিক্সের কাজে প্রচুর চাহিদা থাকাই টাকা ইনকামের পথ সহজ হয়ে গিয়েছিল। 


    আমার বিয়ের একবছর পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এখনও কোন বেবি হয়নি। কারণ একটা বেবি এক মাস হওয়ার পর নষ্ট হয়ে যায় এরপর আর বেবি আসেনি। তারিফ যত বেশি টাকা আয় করতে থাকে তত বেশি আমার সাথে আচরণ খারাপ হতে থাকে এবং তারিফ বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলতে থাকে এবং যেকোনো কিছুতে আমাকে গালি দিতে থাকে । আমিও মুখ বুঝে সহ্য করতাম। কারণ পরিবার তো আর আমাকে বিয়ে দেয়নি। আমি নিজের পছন্দ মতোই বিয়ে করেছি। এমন অবস্থায় আছি, না পারছি ছেড়ে আসতে, না পারছি তার কাছে নিজের ইচ্ছায় থাকতে।  তারিফ থেকে টাকা খাওয়ার জন্য পরবর্তীতে তার মা এবং তার একটা বোনও তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে নানা অপবাদ দিতে থাকে এবং আমাকে নির্যাতন করতে থাকেন। তারিফই এখন পরিবারের সব। সে অন্যায় কথা বললেও সেটা ন্যায়। ভুল কথা বললেও সেটা সঠিক। বুঝেছি যার আছে টাকা, সেই সোজা পথকে বাঁকা বললেও বাঁকা। আর যার টাকার পকেট ফাঁকা সেই সোজা পথকে সোজা বললেও বাঁকা। কথায় আছে না, যে গরু দুধ দেয়,সেই গরু লাতি দিলেও ভালো। 

    পরিবারের সকলই তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করতে থাকে এবং টাকা হাতানোর চেষ্টা  করতে থাকে। এই কাজে পরিবারের বাবা মায়ের পাশাপাশি তার দোলা ভাইয়েরা এবং বন্ধুরাও কোনো রকম পিছিয়ে ছিল না। অল্প সময়ে টাকার মালিক হওয়াই অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না। এই অহংকার শুধু তার বউয়ের জন্য এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষের জন্য। তার পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে সেই টাকা দিতে থাকেন। আবার অনেকজন কে মোবাইল এবং নানা ধরনের সামগ্রীও পাঠিয়েছেন। আমি মাঝে মধ্যে নিজের খরচ, কাপড় চোপড় ও চিকিৎসার জন্য টাকা চাইলে তখন সেই বিভিন্ন অসভ্য ভাষায় গালি গালাজ করত। আমি তবুও তার সাথে ভালো আচরণের চেষ্টা করতাম। কিন্তু তাতে কোনো পরিবর্তন হতো না, আরো বাজে ভাবে গালি গালাজ করত। মানুষ যখন কষ্টে থাকে তখন সে সেটা কাউকে না কাউকে বলে নিজেকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আমি সেটাও পারছি না। অন্য  কাউকে তো আর দোষ দিতে পারছি না। নিজের পায়ে যে কুড়াল মারে সেই কি আর নিজের বোকামি মানুষ কে প্রকাশ করে? শুকনো জায়গাই যে স্লিপ খেয়ে পড়ে যায়, সে ব্যথা কি আর মানুষকে দেখানো যায়? এমন সময় মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। দিনে একবেলা খেলে খাই অন্যতায় না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি কত দিন। এই অবস্থায় আমার শরীর দূর্বল ও রুগ্ন হয়ে পড়ে নানা রকম অসুখ দেখা দিতে শুরু করে। তারিফ আগে দিনে সাত আট বার কল করে কি করছি কেমন আছি জিজ্ঞেস করত। সেই মানুষটাও কল করে খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে বাড়ির নাম্বারে কল না ধরলে আমার নাম্বারে কল দিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে কল কেটে দেয়। আমার সাথে কথা বললেও আগের মতো সুন্দর করে কথা বলে না। বাড়িতে বাবা মায়ের কিংবা বোনের কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে অথবা নিজে নিজে একটা বানিয়ে কথা বলে গালি গালাজ করে কল কেটে দেয় । আমাকে সেই এখন সহ্য করতে পারে না। আমার কথা তার কাছে তীরের মতো আঘাত করে । 


    এই অবস্থায় দুই বছর পর দেশে আসল এবং সেই আগের মতো নতুন করে সবকিছু সুন্দর ভাবে চলছিল। তবে সেই বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথা বলত এবং বন্ধুদের নিয়ে সারাদিন এইদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে রাত করে বাড়ি ফিরত। মেয়েদের পিছনে টাকা খরচ করতে থাকে। রাতের খাবার শেষ করে সেই আর আমি গল্প করছিলাম কথার মাঝখানে সে বলল তার বেবি লাগবে। আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি আমাদের একটা ছোট্ট বাবু হবে। সেই বলল, আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না। আমি আরেকটা বিয়ে করব। আমি চুপ হয়ে থাকছি দেখে হেসে হেসে বলে আরে পাগলি রাগ করলে নাকি? তুমি কি চাও না আমাদের বেবি হোক? আর ইসলামে তো চার টা বিয়ে করার অনুমতি আছে। আর আমি তো চারটা করতে চাচ্ছি না। তাই না? আমি মনে মনে বললাম, আরে বেডা ইসলাম চারটা বিয়ের অনুমতি দিছে ঠিক আছে কিন্তু চারটা বউয়ের মধ্যে তো সমান বন্টন করতে হবে। সুখে রাখতে হবে। তোর একটা বউকে সুখে রাখার ক্ষমতা নাই। তুই করবি চারটা বিয়ে? হাসি যেন ভিতরে থামতেই চাইল না। সামান্য হাসি বেরিয়ে আসল হা হা হা । আমাকে হঠাৎ হাসতে দেখে সেই আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে চোখ বড় করে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আমি হাসি থামিয়ে নিচু স্বরে বললাম কিছু না। ঐ একটু পুরানো কথা মনে পড়ছে। এভাবে কেটে গেল সাড়ে তিনটি বছর তবুও আমাদের কোনো বেবি আসল না। দেশে তিন মাস থাকার পর সেই আবার সৌদি আরব চলে গেছে। আবার বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলা শুরু করে দেয় এবং  আমার সাথে খারাপ আচরণ করা শুরু করে। 


    আমি এইসব আচরণ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করার চিন্তা মাথায় আসত কিন্তু আমার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকাই আত্মহত্যা করার সাহস পাই নি। কারণ আখিরাতের সেই জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে পৃথিবীর যন্ত্রণা যেন একটা পিপীলিকার কামড়ের মতো তাই আর আত্মহত্যা করা হয়ে ওঠে নি । একবার রাগের মাথায় দশটা ঘুমের ওষুধ হাতে নিয়ে চার টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহ্ সেই বার বাঁচাইছে, না হয় দশটা ওষুধ একসাথে খেয়ে নিজের অবচেতন মনে পরকালে জাহান্নামের আগুনে জ্বলে জ্বলে মরে আবার জীবিত হতে হতো। মানসিক যন্ত্রণায় অনেকবার এরকম একটা দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। পারিবারিক কাজকর্ম, মানসিক চাপ, স্বামীর ভালোবাসা না পেলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু দিনের পর দিন তারিফের অসভ্য ভাষার গালি গালাজ, বিয়ের সময় আমাদের পরিবার থেকে তেমন কিছু দেয়নি সেটার জন্য তার মা বোনের অত্যাচার যেন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কথায় কথায় কোটা দিতে শুরু করেন। 





    তারিফ দেশে যখন ছিল তখন টাকা না থাকলেও আমাদের পরিবারে মা এবং ভাই বোনের লেখা পড়ার জন্য টাকা দিত। কিন্তু সৌদি আরব যাওয়ার পর সেই আগের মতো আর ভালোবাসাও নেই এবং টাকাও পাঠাই না। দেশে যখন টাকা ছিল না তখন যতটুকু পারে আমাদের পরিবারে টাকা দিত। এখন তার টাকার অভাব নেই কিন্তু দেয় না। তবুও যখন ভাই বোনদের পড়ালেখা ও আম্মুর  ওষুধের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয় তখন আমি তার কাছে টাকার কথা বললে ফকিন্নির মেয়ে সহ বিভিন্ন ধরনের গালি গালাজ করে টাকা দিত। কিন্তু গালি গালাজ শুনে টাকা নেওয়ার চেয়ে না নেওয়াই সম্মানের। কেউ না খেয়ে মারা গেলেও এমন টাকা নিতে চাইবে না। দ্বিতীয় বার বিদেশ যাওয়ার এক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসলে ভালোই আচরণ করে আবার বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথাও বলে। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বললেও মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিয় যে, দিন শেষে আমার কাছেই তো আসতেছে। তাই বিদেশ থেকে গালি গালাজ করলে যে কষ্ট পাই দেশে গালি গালাজ করলে সে রকম কষ্ট পাই না। এই গালিকেই জেমসের কোনো বিখ্যাত গান শুনছি মনে করে শুনতে থাকি।  ভালোও লাগে না, খারাপও লাগে না এই গানের স্বাদ অনেক দিন না খেয়ে, হঠাৎ করে খেতে পাওয়ার মতো। আগে খেয়ে নি, কেমন স্বাদ হয়েছে পরে বলব। তার এই মার ধর গালি গালাজ খাওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যেতাম যদি না আমি নিজে তার সাথে বের হয়ে না আসতাম। এরপরেও চলে যেতাম যদি সংসারের মধ্যে অভাব জিনিসটা না থাকত। বাড়ির চলে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ছোড়ে ফেলে নিজের পছন্দের স্বামীর সাথে সংসার চলছে। ছেড়ে যাওয়া আর হচ্ছে না। বাবু না থাকাই বাবুর কথা বলে আরেকটা বিয়ের কথা বলে। কিন্তু বিয়ে করে না। না জানিয়ে বিয়ে করে আনলেও এতটা কষ্ট পেতাম না যতটা সেই বিয়ে করবে করবে বলে দিচ্ছে। সেই এটা চিন্তা করে না যে, বাচ্চাটা মেয়েরা একা একা জন্ম দেন না। স্বামী স্ত্রীর চেষ্টা আর আল্লাহর রহমত হলেই কেবল এটা সম্ভব। 


    আমি তার কথায় সব সময় চুপ চাপ থাকার চেষ্টা করি। কারণ কোনো কিছু বললেই গালি দেয়। ভালোবাসা পাওয়ার আশায় কিছু বলে গালি শুনার চাইতে চুপ চাপ থাকাই শ্রেয়। চিন্তা করি জীবনে কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হলো এবং হচ্ছে। কাকে নিয়ে কি কল্পনা করেছিলাম। আহ জীবন আহ। বাড়িতে প্রথম দিকে এই কথাগুলো বলতাম কিন্তু তারা আমার চাইতেও বেশি কষ্ট পাই। এখন কষ্ট পেলে আমি একা পাই। কিন্তু বাড়িতে বললে পরিবারের সবাই কষ্ট পাই। তাই এখন আর বলি না। বৃহত্তর স্বার্থেই যেন নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন। দ্বিতীয় বার দেশে আশার পর আমাদের পেঠে বাচ্চা আসে। এর মধ্যে সেই আবার বিদেশ চলে গেছে। অশান্তি লাগলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা চাইলে দেয় না। এতদিন বাচ্চার জন্য পাগল ছিল আর এখন বাচ্চা সুস্থ ভাবে হওয়ার জন্য ডাক্তার দেখানোর জন্য টাকা দেয় না। টাকা খোঁজে বিরক্ত হয়ে পরে আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তার দেখাই। বাবু হওয়ার আগে আমার যখন অশান্তি লাগছিল তখন স্থানীয় ধাত্রীর পরামর্শে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সিজারের মাধ্যমে আমাদের ছেলে সন্তানের জন্ম  হয়। আমার ছেলে আমার জীবনে রহমত নিয়ে এসেছে তাই তার নাম রাখলাম রহমত।বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই সে অসুস্থ ছিল ।তার অনেক টাকা কিন্তু আমার জন্য না এই টাকা। তার কাছে যখন আমি টাকা চাই তখন তার প্রাণ চাই মনে করে। চিকিৎসার জন্য টাকা দিতে বললে দেয় না। গালি গালাজ করে। এখন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কোথায়? ভালোবাসা থাকলে অসুস্থতার কথা শুনার সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য টাকা দিবে তো দূরের কথা উল্টো গালি গালাজ করে। 


    একদিন বাবু রহমতকে বড় করে হাফেজ বানানোর ইচ্ছের কথা বলার পর সেই বলে, দেখ হাফেজ হয়, নাকি গুন্ডা হয়। একজন বাবার কাছে এমন কথা শুনে আমার প্রাণ বেরিয়ে যেতে চাইল। যদিও বাবু হওয়ার পর প্রতিদিন কল দিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আমার সাথেও আগের থেকেও একটু ভালো আচরণ করা শুরু করেছে। তার হৃদয়ের জাহান্নাম থেকে আমাকে ছেড়ে দিলে এক প্রকার মুক্তি পেতাম কিন্তু সেই ছেড়ে দিবে না। তার হৃদয় রাজ্যে আমাকে বন্ধি রেখে তার হৃদয়কে শান্ত করবে।


    এখন আফসোস করে আনমনে আপনা আপনি বলি, আমার অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত ও তাড়াহুড়োর ফল ভোগ করে যেতে হচ্ছে সারাজীবন।

     যে জীবন মৃত্যু যন্ত্রণার সমান।

    সেই আমাকে ফেলবে না মেরে,

     যাবে না ছেড়ে,

    শুধু সুখগুলোই নিবে কেড়ে।



                               সমাপ্ত



    শিক্ষার্থী,
    ইয়াছিন আরাফাত 
    কবি ও গল্পকার। 
    অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
    উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 
    ইমেইল :- eashina404@gmail.com



    কোন মন্তব্য নেই:

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    House Of Al Towfiqi https://htorg.blogspot.com/2025/02/towfiq-sultan.html

    Translate

    এই ব্লগটি সন্ধান করুন

    মোট পৃষ্ঠাদর্শন