• Breaking News

    Breaking News House Of Al Towfiqi Promote By, ☮️ #Al_Towfiqi_Family / #আল_তৌফিকী_পরিবার ... আল তৌফিকী পরিবার || Al Towfiqi Family || عائلة التوفيقي

    Promote By, #WELFTION / وعلفشن# / #ওয়েলফশন

    Welftion Love Of Welfare

    Towfiq Sultan - তৌফিক সুলতান

    Translate

    অনুসরণকারী

    মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

    কক্সবাজারের আনন্দ ভ্রমণ

    ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণ:ছুঁয়ে এলাম সমুদ্র জল!

    অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি ত্বহা বাবু আর তুবা মনি মহা উৎসাহে টিভি দেখছে। পিঠাপিঠি ভাই বোন ওরা। ত্বহাবাবুর বয়স পাঁচ বছরে পড়েছে, নীলফামারিতে আমাদের কর্মস্থলের পাশে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি ওকে। আর তুবা মনির বয়স হলো একুশ মাস। ত্বহা শুধু প্রশ্ন করে, প্রচুর কৌতূহল সব বিষয়ে। অস্পষ্ট কিছু শব্দ সেও উচ্চারণ করতে পারে।

    ডিসকভারি চ্যানেলে তখন উন্মুক্ত সমুদ্রের মধ্যে কয়েটা ডলফিন সাঁতার কাটছিল। ঢেউ গুলো সমুদ্রের পাড়ে এসে আছড়ে পড়তে দেখে ত্বহা বাবু বলে উঠলো বাবা সত্যিকারের সমুদ্র কেমন হয়? আমি বললাম সমুদ্র এমনই হয় বাবা। তুমি দেখবে? ওর মা কথার প্রায় মাঝখানেই বলে উঠলো চলো এবার সমুদ্রের পাড়ে ঈদ করি আমরা। কি ত্বহা বাবু! বাবাকে বলো এবার ঈদের ছুটিতে আমাদের কক্সবাজার নিয়ে যেতে ! তা হলেই তো তুমি সত্যিকারের সমুদ্র দেখতে পাবে। কথাটা অবশ্য মন্দ বলো নি, এবার ঈদে তাহলে কক্সবাজারই ঘুরে আসা যাক বেশ জোরেশোরেই বলে উঠলাম আমি। আমরা স্বামী স্ত্রী দু জনই কর্মজীবী। চাকরি জীবন যেমন হয় আরকি, অফিস থেকে বাসা আর বাসা থেকে অফিস। একদম গৎ বাঁধা সবকিছু । ভাবলাম এর মধ্যে একটু ঘোরাঘুরির সুযোগ পেলে সেটা আমাদের নেয়াই উচিত। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সুন্দর কিছু সময় তো উপভোগ করা যাবে অন্তত! সব মিলিয়ে তখনই সিদ্ধান্ত হলো ঈদ এবার কক্সবাজার করব আমরা।
    সবাই মিলে ঈদ ঘোরাঘুরি 

    আমার ছোট মামাতো বোন কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। কল দিলাম বোন জামাইকে,উনি তো মহা খুশি। বললেন বড়ভাই আমরা বেশ কবছর ধরে এখানে আত্মীয় স্বজন ছাড়াই ঈদ করি। আপনারা আসলে তো খুবই ভাল লাগবে। বোনকে বললাম আসছি তাহলে এবার সামুদ্রিক মাছ আর শুটকি কিনে রেডি থাকো তোমরা!


    নীলফামারী থেকে কক্সবাজার অনেক দূরের পথ। তাছাড়া রোজা রেখে বাচ্চাদের নিয়ে বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ কষ্টদায়ক হবে। তার ওপর আবার ঈদের সময় টিকেট পাওয়ার ঝক্কিঝামেলা বেশি। তাই উড়ো জাহাজে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলাম। পরের দিন খোঁজ নিয়ে জানলাম, সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার সরাসরি সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট আছে। দেরি না করে বুকিং করে ফেললাম আমাদের যাওয়া আসার টিকেট।


     

    নির্ধারিত দিনে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে পৌঁছে দেখি আমাদের ফ্লাইট পিছিয়েছে ঘন্টা খানেক।৷ কী আর করা, বসে থেকে রানওয়েতে উড়ো জাহাজের ওঠা নামা দেখে আর বাবুদের সাথে নিয়ে পায়চারি করতে থাকলাম। অবশেষে আসলো আমাদের সময়। সৈয়দপুরের রানওয়ে যখন আমরা ছাড়লাম তখন বেলা সাড়ে বারোটা। নীল আকাশ আর সাদা মেঘের মধ্য দিয়ে ঘন্টা দেড়েক ওড়ার পরে নিচে হঠাৎই সমুদ্রের দেখা মিললো। সাথে এয়ার হোস্টেজের সুমিষ্ট কন্ঠ, আমরা কক্সবাজার বিমান বন্দরে নামতে চলেছি এই বার্তা।
    আমরা তাহলে চলেই এলাম কক্সবাজার!
    কি আনন্দ আমরা সমুদ্রে 
     

    বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে একদম সোজা বোনের বাসায়। তখন সময় দুপুর আড়াইটার মত। ত্বহা বিমান থেকে নামা অব্দি নাহলেও দশবার বলেছে, বাবা সমুদ্র কই,বাবা বাবা.. সমুদ্রে চলো...!!


    বাসায় পৌঁছার পর ওরা দুজন আমার বোনের মেয়ে তাসনিয়ার সাথে খেলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বোনকে বুঝিয়ে বললাম যে আমরা একটা হোটেলে উঠব। কারণ বাসায় থেকে ভ্রমণের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। অনেক কষ্টে বোনকে রাজি করানো গেল।

     বোনজামাই শহিদুল ভাই সহ গেলাম হোটেল খুঁজতে। আমরা রুম পেলাম লাবনী আর সুগন্ধা পয়েন্টের মাঝামাঝি রাস্তার পাশের একটি হোটেলে। লাগেজ পত্র নিয়ে রুমে উঠার পর সবাই মিলে সুগন্ধা পয়েন্টে গেলাম সমুদ্র দেখতে। একে তো রোজার মাস তার ওপরে আবহাওয়া গরম, শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছিল। তবে বিচের কাছাকাছি এসে বেশ ভালই লাগল। রোজার জন্যই হয়ত সমুদ্র পাড়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় নেই এখন।

    সমুদ্র সৈকতে বালুর প্রাসাদ তৈরির শুরু 


    কি বিপুল জলরাশি! ছোট-বড় ঢেউগুলো এসে আছড়ে পড়ছে পরিষ্কার ভেজা বালুর ওপর। ত্বহা প্রথম বার সমুদ্র দেখে বেশ অবাক হয়েছে। আর তুবা মনি ভয় পাচ্ছে কিছুটা। তবে ওদের মায়ের চোখেমুখে বেশ উচ্ছ্বাস দেখলাম। সব মিলিয়ে প্রথম বার সমুদ্র দেখাটা বেশ উপভোগ করেছিলাম আমরা।

    আসল ঘোরাঘুরি শুরু হয়েছিল ঈদের দিন থেকে। নামাজ পড়লাম কক্সবাজার স্টেডিয়ামের সামনের প্রধান ঈদ গাহে। তারপর হোটেল থেকে বোনের বাসায় গিয়ে সবাই মিলে সেমাই মিষ্টিমুখ করার পর সিদ্ধান্ত হলো মহেশ খালী দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার। 


    স্পিডবোট যখন আমাদের মহেশ খালী নামিয়ে দিল তখন সরু প্যাসেজের মত লম্বা জেটিটা চোখে পড়ল। আশেপাশে কেউড়া, গোল পাতার মত ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। এটা কি সুন্দরবন নাকি?বলে উঠলাম আমি, বোনজামাই বলল না ভাই তবে কিছুটা সুন্দর বনের ফিল নিয়ে নেন, এক ভ্রমনে দুই ফ্লেভার আরকি! মুচকি হেসে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমরা। মহেশখালীতে শুটকি আর লবণের ঘের দেখলাম। ঝাউবন,আর বেশ কিছু মন্দিরও দেখেছিলাম। বিকেলের দিকে বোনের বাসায় ফিরে আরেকপ্রস্থ খাওয়া দাওয়া হলো। রুপচাঁদা মাছ, চিংড়ি মাছ, শুটকি ভর্তা আরো দুই এক রকম তরকারি করেছে আমার বোন। খেতে খেতে পরদিন কোথায় যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আলাপও করা হলো।বোনজামাই বলল হিম ছড়ি মেরিন ড্রাইভ এবং ইনানি বিচ ঘুরতে হবে, ঐদিকটায় মিনি বান্দরবন, রেজুখাল আর এই দিকে ফিশওয়ার্ল্ড এই কয়টা জিনিস আপনাদের দেখতেই হবে বড়ভাই।আমি বললাম হু তাহলে কালকে চলেন হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে আসি।

    মাছটাতো বেশ স্বাদ হয়েছে সালমা,তা আর কি কি মাছ খেয়েছ তোমরা এখানকার ? খেতে খেতে বোনকে বললাম আমি। আরো অনেক মাছ আছে ভাই তোমরা আরো কটা দিন থাকো তাহলে একে একে সব মাছ খেয়ে যেতে পারবে। এই কয় দিনের সেহেরি ইফতার সব আমার বোন পাঠিয়েছে,অর্থাৎ আমরা থেকেছি হোটেলে কিন্তু প্রতি বেলার খাবারই পাঠিয়েছে ওরা। বোনগুলো এমনই হয় হয়ত।

    সমুদ্র সৈকতে বালু দিয়ে আঁকাআকি করছে দুইটি শিশু 


    সেদিন সন্ধ্যায় সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তায় আমরা মাছ ভাজা খেতে গেলাম। এখানে ছোট ছোট ভ্যানে করে কাঁকড়া, অক্টোপাস, লবস্টার, চিংড়ি ফ্রাই, বারবিকিউ করে বিক্রি হয় রাস্তার পাশে। কাঁকড়া, স্কুইড ,লবস্টার আর কয়েকটা মাছ খেয়েছি আমি। ত্বহা বাবু আর তুবামনি কাঁকড়া খেয়েছে তবে ওদের মা শুধু স্কুইডের ফ্রাই খেয়েছে দু একটা। কাঁকড়া দেখে নাকি ওর ভয় ভয় লাগে!


    ঈদের পরের দিন সকালে আমরা বের হলাম হিম ছড়ি পাহাড় আর ঝর্ণা দেখতে। অটোতে করে যখন মেরিন ড্রাইভ রোডে ঢুকলাম তখন মনে হলো এটাই কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান। রাস্তার একপাশে সমুদ্র অন্য পাশে পাহাড়। কিছু কিছু স্থানে তো সমুদ্র একদম রাস্তার কাছাকাছি। বালুর ওপরে রাখা সাম্পান, জলের ঢেউ, বাতাস, ঝাউ গাছ, পাহাড় আর গাছ পালার ঝোপঝাড় মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভার মধ্য দিয়ে আমরা পৌঁছুলাম রেজুখাল সংলগ্ন কক্সবাজারের মিনি বান্দরবানে। আমরা পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। ত্বহা বাবু উপরে উঠে ভালই মজা পেয়েছে বলে মনে হলো। একটু পর পর বলছে বাবা পাহাল পাহাল,ও মাঝে মাঝে "র"এর উচ্চারণ করতে পারে না। তাই পাহাড় কে পাহাল শোনাচ্ছিল। আমরা কিছুক্ষণ বসে ছবি তুলে চলে আসলাম হিম ছড়ি। টিকেট কেটে ঢুকে হাতের ডান পাশে পড়বে ঝর্ণা। বেশ কিছু লোক সমাগম হয়েছে দেখলাম। সব সময়েই নাকি এমন পর্যটক থাকেন এখানে।ঝর্ণা খুব বেশি একটা বড় না, তবে দেখতে সুন্দর আছে। ঝর্ণার পানি হাতে নিয়ে তুবা মনির গালে ছিটিয়ে মজা করলাম কিছুক্ষণ। এবার পাহাড়ে ওঠার পালা, সবাই পাহাড়ের গায়ে লম্ব ভাবে দেয়া সিড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। অনেকগুলো সিঁড়ি ভেঙে যখন আমরা পাহাড় চূড়ায় পোঁছালাম তখন প্রায় বিকেল। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ওপর থেকে সমুদ্রের জলে সূর্যের আলোর অপূর্ব খেলা দেখলাম আমরা। সবাই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিল। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিচে নেমে পড়লাম।

    বাবা মেয়ের ঈদ 

    ইনানি সৈকতটা বেশ নিরিবিলি, তার একটু সামনে গেলেই একটি কাঠের সেতু ও ঝাউবন দেখা মিললো । আমার বোনটা বলল ভাইয়া এই জায়গায় যাই চলেন। ঝাউবন, কাঠের সেতু তার বিপরীতে বড়সড় একটা পাহাড়। নির্মল বাতাসে এখানে মন হারিয়ে যাওয়ার মত আবহাওয়া। ত্বহা তুবা, আর আমার বোনের মেয়ে তাসনিয়া নিচে নেমে ঝাউ বনের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি আর খুনসুটি করল কিছুক্ষণ। আমরা বসে দেখছিলাম ওদের।

    ঝাউবন থেকে ফেরার পথে দেখলাম প্যারাসেলিং। ঐতো প্যারাশুট দড়ি বেঁধে উড়া উড়ি আরকি। বাচ্চারা প্যারাসেলিং দেখে বেশ মজা পেল মনে হলো, অবশ্য আমাদেরও ভালই লাগছিল দেখতে।

    পরের দিন যাওয়া হয়েছিল ফিশ ওয়ার্ল্ড দেখতে। কত বিচিত্র ধরনের মাছ যে আছে ওখানে না গেলে বুঝা যাবে না। কাঁচের একুরিয়াম পুরো ঘর জুড়ে তার ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে জীবন্ত হাঙ্গর, কচ্ছপ আর নানান সামুদ্রিক জীব। বেশ মনোমুগ্ধকর লেগেছে এই ফিশ ওয়াল্ড।

    পাহাড় সমুদ্রের মাঝে ওদের দুষ্টুমি 

    সমুদ্র পাড় হতে ঈদ মোবারক 

    ঘুরাঘুরি মাঝে সমুদ্র সৈকতে সবাই এক রংয়ের পোশাকে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম আমরা। আর সৈকতের সামনে দোকানগুলো থেকে কেনা হয়েছিল আচার, শামুক ও মুক্তার মালা। শুটকি কিনেছিলাম কিছুটা,মহেশ খালি থেকে কিনেছিলাম পাহাড়ি পোশাক আর চন্দন। 

    পরের দিন সকালে আমাদের ফিরতি ফ্লাইট। রাতে তাই শেষ বারের মত সমুদ্র দেখতে গেলাম আমরা। সমুদ্র সৈকতে ত্বহা বাবুকে নিয়ে ঘোড়ায় উঠলাম আর ও ঘুড়ি কিনে চাইলে ওকে ঘুড়ি কিনে দেয়া হলো। শেষ দিন তাই সৈকতে মধ্যে বসে বালু দিয়ে রাজপ্রাসাদ বানানোর অনুমতিও মিলল আরেকবার।


    দুপুর বারোটা নাগাদ বোন দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা পোঁছালাম কক্সবাজার বিমান বন্দরে। এবার অবশ্য যথা সময়েই এলো আমাদের বিমান। ওঠার আগে এই কয় দিনে দেখা সকল স্মৃতিগুলো অকপটে আরেকবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কালকে থেকেই আবার নিয়মিত জীবন শুরু তবে এই ভ্রমণের স্মৃতি আমাদের থেকে যাবে আজীবন। মাঝে মাঝে সময় পেলে এমন ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ব। বেশ সতেজ শরীর ও মন নিয়ে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে উড়ে চললাম আমরা।
    -নুরুল্লাহ কামিল।
    wushukamil621@gmail.com
    মুঠোফোন :01778117147



    1 টি মন্তব্য:

    House Of Al Towfiqi https://htorg.blogspot.com/2025/02/towfiq-sultan.html

    Translate

    এই ব্লগটি সন্ধান করুন

    মোট পৃষ্ঠাদর্শন