শুধু নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে। শুধু নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে। আমাদের রিযিকে বারাকাহ আসতে পারে শুধুমাত্র নেক নিয়তের কারণে; আবার রিযিক কেড়ে নেয়া হতে পারে শুধুমাত্র বদ নিয়তের কারণে। কুরআনে সুরা ক্বালামে আল্লাহ তা'আলা খুব সুন্দর উপমা দিয়েছেন একটি ঘটনার মাধ্যমে। আসুন জেনে নেই কুরআনের সেই গল্প! তাফসীরে (ইবন কাসীর) এসেছে, ঘটনাটি Yemen/Ethiopia এর একদল সহোদরের। একটি মত আছে যে তারা আহলে কিতাব ছিলেন। তাদের বাবা একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তার একটি বাগান ছিল। তিনি প্রতিবছর বাগানে যা ফলন হত, তা থেকে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকিটা দান করে দিতেন। এতে আল্লাহ তা'আলা তার রিযিকে আরো বারাকাহ দিতেন। তো তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা যখন বাগানটি দেখাশুনা করতে লাগল, তখন তারা ফন্দী আঁটল যে বাবার মত বোকামি (!) তারা করবে না। বাবা বোকা ছিলেন তাই দান করতেন। কিন্তু তারা তো ভারী বুদ্ধিমান! তাই তারা সবটাই নিজেদের জন্য রেখে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ! ফসল কাটার আগের দিন তারা পরিকল্পনা করল, পরদিন খুব ভোরেই তারা বাগানে উপস্থিত হবে। এমকি তারা এ ব্যাপারে শপথ পর্যন্ত করল! যাতে কোনো সাহায্যপ্রার্থী / মিসকীন আসের আগেই তারা সব ফসল কেটে নিতে পারে। তাতে করে আর কাউকে কিছু দান করা লাগবে না। ব্যস! আপদ বিদায়! তারা একটিবারও আল্লাহকে স্মরণ করল না। ইন শা আল্লাহ বলল না।Little did they realize that Allah had His plans too! রাতে যখন তারা গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন সেই বাগানের উপর প্রচন্ড ঝড় বয়ে গেল যা বাগানটিকে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিল। এদিকে বাগানের মালিকগণ অঘোরে ঘুমাচ্ছে! খুব ভোরে তারা ঘুম থেকে একজন আরেকজনকে ডাকতে লাগল। যেন খুব দ্রুত তারা বাগানে পৌঁছে কাজ সেরে ফেলতে পারে। আর তারা ফিসফিস করে একে অপরকে বলল - আজ কেউ আমাদের কাছে কিছু চাইতে আসতে পারবে না - তার আগেই আমরা সব ফসল কেটে ফেলব। এবং নিজেদেরকে খুব সক্ষম মনে করল এ কাজের ব্যাপারে। এখানে একটু pause করে আমরা আমাদেরকে judge করি। আমরাও কি অনেক সময় এমন করি না? যে এমনভাবে কোনো কিছুর পিছনে টাকা খরচ করে ফেলি যেন যাকাত না আসে অথবা দান করা না লাগে? অথবা এমন সময়ে কোনো কাজ করি যাতে আমি নিজেই অক্ষম হয়ে যাই দান করতে। কারো সাথে কিছু share করতে না চাইলে তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু consume করে ফেলি। নিজেকে ইচ্ছকৃতভাবে অক্ষম করে আমরা আসলে কাকে ফাঁকি দিচ্ছি? আল্লাহ তা'আলার কোনো দরকার নেই আমাদের দানের। তিনি সকল প্রয়োজনের ঊর্ধে। দান করে আমরা নিজেদেরই উপকার করি। শুধুমাত্র দান করার নিয়তেই রিযিকে বারাকাহ আসে! আর দান করলে পরে আরো কত নেয়ামত আল্লাহ তা'আলা দেন! ফিরে আসি গল্পে - তো তারা বাগানে এসে হতভম্ব! এ কী অবস্থা বাগানের? এ কী করে সম্ভব? নিশ্চয়ই পথ ভুল হয়েছে! সম্বিত ফিরে পেয়ে তারা বুঝল, আসলে এ ছিল তাদের শাস্তি। বদ নিয়তের কারণে। তাদের মাঝে সবচেয়ে বুঝদার ব্যক্তিটি বলল, আমি কি তোমাদের বলিনি যে আল্লাহকে স্নরণ করো? তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বলল, নিশ্চয়ই আমার যুলম করেছি। তারা আল্লাহ'র কাছে তওবা করলো এবং আশা করলো যে আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বিনিময় দিবেন। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা আমাদের স্মরণ করে দিচ্ছেন - আযাব এভাবেই আসে। আর আখিরাতের আযাব তো আরো ভয়ংকর! এই ঘটনাটি থেকে শিখার অনেক কিছু আছে -১। নেক নিয়তের কারণে রিযিকে বারাকাহ আসতে পারে। আবার বদ নিয়তের কারণে রিযিক কেড়েও নেয়া হতে পারে এবং বিপদ নেমে আসতে পারে।২। কোনো অবস্থাতেই যেন আল্লাহ'র স্মরণ থেকে গাফেল না হই।৩। পরবর্তী সময়ে কিছু করার কথা উল্লেখ করলে অবশ্যই ইন শা আল্লাহ বলা উচিৎত।৪। দান করলে সম্পদ কমে যায় না বরং বেড়ে যায়।৫। ভুল বুঝতে পেরে immediately তওবা করা উচিৎ আর আল্লাহ'র কাছে ভালো আশা রাখা উচিৎ।সূরা ক্বালামের সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর বাংলা অনুবাদ নীচে দেয়া হল। তাফসীর পড়ে দেখার অনুরোধ থাকল। "আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেমন পরীক্ষা করেছি উদ্যানওয়ালাদের, যখন তারা শপথ করেছিল যে, সকালে বাগানের ফল আহরণ করবে, এবং ইন শা আল্লাহ বলল না। অতঃপর আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে বাগানে এক বিপদ এসে পতিত হলো। যখন তারা নিদ্রিত ছিল। ফলে সকাল পর্যন্ত হয়ে গেল ছিন্নবিচ্ছিন্ন তৃণসম। সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও, তবে সকাল সকাল ক্ষেতে চল। অতঃপর তারা চলল ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে, আজ যেন কোন মিসকীন ব্যক্তি তোমাদের কাছে বাগানে প্রবেশ করতে না পারে। তারা সকালে লাফিয়ে লাফিয়ে সজোরে রওয়ানা হল। অতঃপর যখন তারা বাগান দেখল, তখন বললঃ আমরা তো পথ ভূলে গেছি। বরং আমরা তো কপালপোড়া, তাদের উত্তম ব্যক্তি বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি? এখনও তোমরা আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছো না কেন? তারা বললঃ আমরা আমাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, নিশ্চিতই আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম। অতঃপর তারা একে অপরকে ভৎর্সনা করতে লাগল। তারা বললঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের আমরা ছিলাম সীমাতিক্রমকারী। সম্ভবতঃ আমাদের পালনকর্তা পরিবর্তে এর চাইতে উত্তম বাগান আমাদেরকে দিবেন। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে আশাবাদী। শাস্তি এভাবেই আসে এবং পরকালের শাস্তি আরও গুরুতর; যদি তারা জানত!" [সূরা ক্বালাম, ৬৮ঃ ১৭-৩৩ ]#কুরআনের_গল্পলেখক :মোঃ মেহেদী হাসানশিক্ষার্থী :আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
House Of Al Towfiqi https://htorg.blogspot.com/2025/02/towfiq-sultan.html